বাংলাদেশে যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে হেলিকপ্টারের ব্যবহার ধীরে ধীরে বাড়ছে। একসময় যা ছিলো শুধুমাত্র উচ্চবিত্ত ও বিশেষ ক্ষেত্রে ব্যবহৃত একটি বিলাসবহুল মাধ্যম, এখন তা নানা প্রয়োজনে ব্যবহৃত হতে শুরু করেছে। বিশেষ করে জরুরি চিকিৎসা সেবা, পর্যটন, কর্পোরেট ডিল, এবং দূরবর্তী স্থানগুলোতে সহজে পৌঁছানোর জন্য হেলিকপ্টারের চাহিদা বাড়ছে। তবে, হেলিকপ্টারের দাম, ভাড়া, এবং এর ব্যবহার সংক্রান্ত অন্যান্য তথ্য সম্পর্কে অনেকেরই সঠিক ধারণা নেই।
এই আর্টিকেলে আমরা বাংলাদেশে হেলিকপ্টার এর দাম, সার্ভিসের মূল্য, ভাড়া, প্রকারভেদ এবং এর ব্যবহারের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। এছাড়াও, এই সেবা ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় লাইসেন্স, রক্ষণাবেক্ষণ এবং ভবিষ্যত সম্ভাবনাগুলি নিয়েও আলোচনা করা হবে, যাতে আপনি হেলিকপ্টার ব্যবহারের বিষয়ে একটি পরিষ্কার ধারণা অর্জন করতে পারেন।
বাংলাদেশে হেলিকপ্টারের ব্যবহারের সুবিধা এবং চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে, এটি যে শুধুমাত্র একটি দ্রুত যাতায়াতের মাধ্যম নয়, বরং একটি প্রয়োজনীয় সেবা হিসেবে নিজেদের স্থান করে নিয়েছে, তা আমরা এই আর্টিকেলে তুলে ধরব।
হেলিকপ্টারের ধরন

হেলিকপ্টারের জানার আগে আসুন জেনে নেই এর ধরন। বাংলাদেশে বেশ কিছু ধরনের হেলিকপ্টার ব্যবহৃত হয়, যার মধ্যে রয়েছে:
- এম্বুলেন্স হেলিকপ্টার: মেডিকেল সেবা প্রদানকারী হেলিকপ্টার, যা জরুরি অবস্থায় রোগী পরিবহন করতে ব্যবহৃত হয়।
- টুরিস্ট হেলিকপ্টার: পর্যটকদের জন্য হেলিকপ্টার সেবা, বিশেষ করে সুন্দরবন বা কক্সবাজারের মতো পর্যটনস্থলগুলির উপরে।
- কর্পোরেট হেলিকপ্টার: ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহৃত হেলিকপ্টার, যা বিশেষ করে বড় প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়িক ব্যক্তিত্বদের জন্য ব্যবহৃত হয়।
- এভিয়েশন হেলিকপ্টার: পাইলট প্রশিক্ষণ এবং অন্যান্য এভিয়েশন কাজের জন্য ব্যবহৃত।
হেলিকপ্টারের দাম কত টাকা?
হেলিকপ্টারের দাম অনেকটাই নির্ভর করে এর ধরন, নির্মাতা, মডেল এবং ব্যবহারযোগ্যতার উপর। বাংলাদেশে হেলিকপ্টারের দাম গড়ে নিম্নরূপ:
- মাঝারি আকারের হেলিকপ্টার: প্রায় ২ থেকে ৫ কোটি টাকা।
- বড় আকারের হেলিকপ্টার: ১২ থেকে ১৮ কোটি টাকা বা তারও বেশি।
- অ্যাম্বুলেন্স হেলিকপ্টার: সাধারণত ৫ কোটি থেকে ১৫ কোটি টাকার মধ্যে।
এছাড়া, কিছু বিশেষ-purpose হেলিকপ্টারের দাম আরও বেশি হতে পারে, যেমন কাস্টম বিল্ড হেলিকপ্টার বা উন্নত প্রযুক্তি সম্পন্ন হেলিকপ্টার।
হেলিকপ্টারের ভাড়া কত প্রতি ঘন্টা
বাংলাদেশে হেলিকপ্টারের ভাড়ার হার বিভিন্ন কোম্পানি ও হেলিকপ্টারের ধরন অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়। হেলিকপ্টারের ভাড়া প্রতি ঘন্টা সাধারণত ৪০ হাজার থেকে ১ লাখ পর্যন্ত হয়ে থাকে। নিচে কিছু প্রধান কোম্পানির হেলিকপ্টারের ভাড়ার তথ্য উল্লেখ করা হলো:
সাউথ এশিয়ান এয়ারলাইনস
সাধারণ কাজের জন্য হেলিকপ্টারের ভাড়া প্রতি ঘণ্টা ৫৫,০০০ টাকা। সিনেমার শুটিং, লিফলেট বিতরণসহ অন্যান্য বাণিজ্যিক কাজের জন্য ভাড়ায় ৩০% অতিরিক্ত চার্জ প্রযোজ্য। ন্যূনতম ৩০ মিনিটের জন্য হেলিকপ্টার ভাড়া নেওয়া যায়। ভূমিতে অপেক্ষার জন্য প্রতি ঘণ্টায় ৫,০০০ টাকা এবং মোট ভাড়ার উপর ভ্যাট প্রযোজ্য।
ইমপ্রেস অ্যাভিয়েশন লিমিটেড
৬ আসনের ইসি ১৩০বি-৪ হেলিকপ্টারের ভাড়া প্রতি ঘণ্টা ১,০০,০০০ টাকা। ভূমিতে অপেক্ষার জন্য প্রতি ঘণ্টায় ৫,০০০ টাকা এবং মোট ভাড়ার উপর ১৫% ভ্যাট প্রযোজ্য।
সিকদার গ্রুপ
৭ আসনের হেলিকপ্টারের ভাড়া প্রতি ঘণ্টা ১,১৫,০০০ টাকা। ৩ আসনের হেলিকপ্টারের ভাড়া প্রতি ঘণ্টা ৭২,০০০ টাকা। ভূমিতে অপেক্ষার জন্য প্রতি ঘণ্টায় ৭,০০০ টাকা এবং ভ্যাট প্রযোজ্য।
স্কয়ার এয়ার লিমিটেড
৬ আসনের বেল-৪০৭ হেলিকপ্টারের ভাড়া প্রতি ঘণ্টা ১,১৫,০০০ টাকা। ৪ আসনের রবিনসন আর-৬৬ হেলিকপ্টারের ভাড়া প্রতি ঘণ্টা ৭৫,০০০ টাকা। ভূমিতে অপেক্ষার জন্য প্রতি ঘণ্টায় ৬,০০০ টাকা এবং ইনস্যুরেন্স খরচ ২,০০০ টাকা প্রযোজ্য।
বাংলাদেশে হেলিকপ্টারের ভাড়া নানা ধরনের সার্ভিস ও কোম্পানির উপর নির্ভর করে। সাধারণত, ছোট আকারের হেলিকপ্টার এবং বড় আকারের হেলিকপ্টারের ভাড়ায় যথেষ্ট পার্থক্য থাকে।
দ্রষ্টব্য: উপরের ভাড়াগুলো কোম্পানি ও হেলিকপ্টারের ধরন অনুযায়ী পরিবর্তিত হতে পারে। সুনির্দিষ্ট তথ্যের জন্য সংশ্লিষ্ট কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করা উচিত।
আরও পড়ুনঃ Yamaha Xabre 150 এর রিভিও ফিচার স্পেসিফিকেশন ও দাম
উপসংহার
বাংলাদেশে হেলিকপ্টারের ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, বিশেষ করে জরুরি সেবা, ব্যবসায়িক প্রয়োজনে এবং পর্যটনের ক্ষেত্রে। যদিও হেলিকপ্টারের ভাড়া সাধারণত উচ্চ হয়, তবে এটি একটি দ্রুত এবং কার্যকরী যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে অনেক ক্ষেত্রেই প্রয়োজনীয় হয়ে ওঠে। দেশের বিভিন্ন কোম্পানি ভিন্ন ভিন্ন ধরনের হেলিকপ্টার সরবরাহ করে, যার ভাড়া বিভিন্ন প্রকারের সার্ভিসের উপর নির্ভর করে।
হেলিকপ্টারের ভাড়া প্রতি ঘণ্টা নির্ধারিত হলেও, ফ্লাইটের সময়কাল, অপেক্ষার সময়, ইন্স্যুরেন্স, এবং অন্যান্য অতিরিক্ত খরচগুলির হিসাবেও কিছুটা পার্থক্য হতে পারে। তদুপরি, যদি কোনো নির্দিষ্ট কাজে হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হয়, যেমন সিনেমার শুটিং বা ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে, সেক্ষেত্রে অতিরিক্ত চার্জ প্রযোজ্য হতে পারে।