সাদাকাতুল ফিতর বা ফিতরা ইসলামে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলমানের জন্য ওয়াজিব। এটি মূলত ঈদুল ফিতরের আগে গরিব ও দুঃস্থদের সহায়তার জন্য নির্ধারিত একটি দান। রমজানের এক মাস সিয়াম সাধনার পর ঈদুল ফিতরের দিন যেন দরিদ্ররাও আনন্দের ভাগীদার হতে পারে, সে লক্ষ্যে ফিতরা আদায় করা হয়।
বাংলাদেশে ফিতরার নির্ধারণ সাধারণত ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রতি বছর রমজান মাসে ঘোষণা করা হয়। শরিয়াহ অনুযায়ী, নির্দিষ্ট কিছু খাদ্যশস্য বা তাদের সমপরিমাণ অর্থ ফিতরা হিসেবে প্রদান করা যায়। এই নির্ধারণ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয় দেশের বর্তমান বাজারদর বিবেচনা করে, যাতে সবাই সহজে ফিতরা আদায় করতে পারেন।
২০২৫ সালের জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশন সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ ফিতরার হার নির্ধারণ করেছে, যা প্রত্যেক মুসলমানের জানা প্রয়োজন। এই নিবন্ধে আমরা ফিতরার পরিমাণ, নির্ধারণ পদ্ধতি, আদায়ের নিয়ম এবং ইসলামের দৃষ্টিতে এর গুরুত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
বাংলাদেশে ফিতরা নির্ধারণের প্রক্রিয়া
ফিতরা নির্ধারণ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইসলামিক বিধান যা সমাজের দরিদ্র ও অসহায় মানুষের সাহায্যের জন্য নির্ধারিত হয়। বাংলাদেশে ফিতরার পরিমাণ নির্ধারণ সাধারণত ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ কর্তৃক নির্ধারিত হয়, যা কুরআন ও হাদিসের আলোকে এবং বর্তমান বাজারদর বিবেচনায় গণনা করা হয়।
ইসলামিক বিধান অনুসারে ফিতরা নির্ধারণ
ইসলামী শরিয়াহ অনুযায়ী, ফিতরার নির্ধারণের মূল ভিত্তি হলো কিছু নির্দিষ্ট খাদ্যশস্য বা তাদের সমমূল্যের মূল্য। রাসুলুল্লাহ (সা.) নির্দেশ দিয়েছেন, ঈদের নামাজের আগে প্রত্যেক মুসলমানকে নির্দিষ্ট পরিমাণ খাদ্যশস্য বা তার মূল্য গরিবদের দান করতে হবে।
ফিতরা নির্ধারণের জন্য নির্দিষ্ট পণ্যসমূহ

বাংলাদেশে ফিতরার হিসাব নিম্নলিখিত খাদ্যশস্যের নির্দিষ্ট পরিমাণের উপর ভিত্তি করে করা হয়—
- গম বা আটা: ১.৬৫ কেজি
- যব: ৩.৩০ কেজি
- খেজুর: ৩.৩০ কেজি
- কিশমিশ: ৩.৩০ কেজি
- পনির: ৩.৩০ কেজি
বর্তমান বাজারমূল্য যাচাই
প্রতিবছর ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের একটি নির্দিষ্ট কমিটি দেশের বিভিন্ন বাজারে গম, যব, খেজুর, কিশমিশ এবং পনিরের মূল্য নির্ধারণ করে। এরপর, বাজারদরের ভিত্তিতে প্রতিটি পণ্যের নির্ধারিত ওজনের মোট মূল্য হিসাব করা হয়।
সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন ফিতরা নির্ধারণ
প্রাপ্ত বাজারদর অনুযায়ী, ফিতরার সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়। যেহেতু গম বা আটার দাম তুলনামূলকভাবে কম, তাই গমের মূল্য অনুসারে সর্বনিম্ন ফিতরার হার নির্ধারিত হয়। অন্যদিকে, কিশমিশ বা খেজুরের দাম তুলনামূলকভাবে বেশি হওয়ায় সেগুলোর ভিত্তিতে সর্বোচ্চ ফিতরার হার নির্ধারিত হয়।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ঘোষণা
ইসলামিক ফাউন্ডেশন চূড়ান্ত মূল্য নির্ধারণ করে আনুষ্ঠানিকভাবে গণমাধ্যমের মাধ্যমে তা প্রচার করে। সাধারণত, প্রতি রমজান মাসে তারা ফিতরার হার ঘোষণা করে এবং জনগণকে নির্ধারিত নিয়মে ফিতরা আদায় করতে উৎসাহিত করে।
বাংলাদেশে ফিতরার পরিমাণ নির্ধারণ একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়, যেখানে ইসলামিক বিধান, বর্তমান বাজারমূল্য এবং গরিব-মিসকিনদের সুবিধার বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হয়। ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতি বছর জনগণের সুবিধার্থে নির্দিষ্ট পরিমাণ ফিতরা নির্ধারণ করে, যা মুসলমানদের জন্য আদায় করা ওয়াজিব।
সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ ফিতরা কত টাকা?
২০২৫ সালে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ সাদাকাতুল ফিতরের সর্বনিম্ন পরিমাণ জনপ্রতি ১১০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ২,৮০৫ টাকা নির্ধারণ করেছে।
ফিতরা আদায়ের ক্ষেত্রে গম, আটা, যব, খেজুর, কিশমিশ ও পনিরের নির্দিষ্ট পরিমাণ বা তাদের সমমূল্যের অর্থ প্রদান করা যায়। নির্দিষ্ট পণ্যের পরিমাণ ও তাদের বাজারমূল্য অনুযায়ী ফিতরার হার নির্ধারিত হয়।
ফিতরা নির্ধারণের পদ্ধতি:
ইসলামী শরিয়াহ অনুযায়ী, সাদাকাতুল ফিতর আদায়ের জন্য নিম্নলিখিত পণ্যসমূহের নির্দিষ্ট পরিমাণ নির্ধারিত হয়েছে:
- গম বা আটা: ১.৬৫ কেজি
- যব: ৩.৩০ কেজি
- খেজুর: ৩.৩০ কেজি
- কিশমিশ: ৩.৩০ কেজি
- পনির: ৩.৩০ কেজি
উপরোক্ত পণ্যের বাজারমূল্য অনুযায়ী ফিতরার পরিমাণ নির্ধারিত হয়। যদি কোনো ব্যক্তি গম বা আটা দিয়ে ফিতরা আদায় করতে চান, তবে তাকে ১.৬৫ কেজি গম বা আটা বা এর সমমূল্যের অর্থ প্রদান করতে হবে। অন্য পণ্যের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য।
ফিতরা আদায়ের নিয়ম:
সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব এবং এটি ঈদুল ফিতরের নামাজের আগে প্রদান করতে হয়। ফিতরা আদায়ের মাধ্যমে রোজার সময়ের ভুলত্রুটি মাফ হয় এবং এটি গরিব-মিসকিনদের ঈদের আনন্দে শামিল করে। ফিতরা আদায়ের জন্য নিম্নলিখিত নিয়মগুলো অনুসরণ করা উচিত:
- সামর্থ্য অনুযায়ী প্রদান: যার কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ (সাড়ে ৭ তোলা স্বর্ণ বা সাড়ে ৫২ তোলা রুপা বা এর সমমূল্যের সম্পদ) রয়েছে, তার জন্য ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব।
- নির্ধারিত পণ্যের পরিমাণ বা মূল্য: উপরোক্ত পণ্যের নির্দিষ্ট পরিমাণ বা তাদের সমমূল্যের অর্থ প্রদান করতে হবে।
- প্রদানকাল: ঈদুল ফিতরের নামাজের আগে ফিতরা প্রদান করতে হবে, যাতে গরিব-মিসকিনরা ঈদের আনন্দে শামিল হতে পারেন।
- প্রাপকদের মধ্যে বিতরণ: ফিতরা এমন ব্যক্তিদের মধ্যে বিতরণ করতে হবে, যারা জাকাত গ্রহণের উপযুক্ত। যেমন: গরিব, মিসকিন, ঋণগ্রস্ত, মুসাফির প্রভৃতি।
ফিতরার তাৎপর্য:
সাদাকাতুল ফিতর মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ বৃদ্ধি করে এবং সমাজের দরিদ্র শ্রেণির মানুষের কষ্ট লাঘবে সহায়তা করে। এটি রোজার সময়ের ভুলত্রুটি মাফ করে এবং রোজাদারের আত্মাকে পবিত্র করে। ফিতরা প্রদানের মাধ্যমে সমাজে সমতা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ঈদের আনন্দ সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।
সুতরাং, ২০২৫ সালে ফিতরা আদায়ের ক্ষেত্রে ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক নির্ধারিত হার ও নিয়ম মেনে চলা প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য। এটি আমাদের ঈমানের অংশ এবং সমাজের দরিদ্র মানুষের প্রতি আমাদের দায়িত্ব পালন করার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।
উপসংহার:
আশাকরি উপরের আর্টিকেলে আপনারা জানতে পেরেছেন ফিতরা কত টাকা এবং কিভাবে দিতে হয়। বাংলাদেশে ফিতরা কিভাবে নির্ধারন করা হয় সকল কিছু উপরের আর্টিকেলে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। তারপরেও যদি আপনাদের কোন প্রশ্ন থেকে তাকে সেটা কমেন্ট করে জানাবেন।