বাংলাদেশে আটার চাহিদা প্রতিদিন বেড়েই চলেছে। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে খাদ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো, সবার কাছেই আটা (Atta) একটি অপরিহার্য খাদ্যপণ্য। তবে সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম বৃদ্ধি, স্থানীয় উৎপাদন সীমাবদ্ধতা, এবং পরিবহন ব্যয়ের কারণে আটার বাজারে প্রভাব পড়েছে। ২০২৫ সালে আটার বাজারের বর্তমান পরিস্থিতি ও দাম সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা ক্রেতাদের জন্য অত্যন্ত জরুরি। এই প্রবন্ধে আমরা বাংলাদেশের বাজারে ২০২৫ সালের আটার দাম, ব্র্যান্ডভিত্তিক মূল্য এবং সংশ্লিষ্ট কারণগুলো বিশদভাবে আলোচনা করবো।
২০২৫ সালের বাজারে আটার দাম কত
বর্তমান সময়ে আটার গড় মূল্য নির্ভর করে এর গুণগত মান, ব্র্যান্ড এবং প্যাকেজিংয়ের উপর। সাধারণত, খোলা আটা এবং ব্র্যান্ডেড আটার মধ্যে দামের পার্থক্য দেখা যায়। নিচের টেবিলে আমরা পুস্টি, এসিআই, ফ্রেশ ও বসুন্ধরা প্রতি কেজি আটার দাম দেওয়া হল।
ব্র্যান্ডের নাম | প্যাকেটের পরিমাণ | মূল্য (টাকা) |
---|---|---|
Pusti Atta | ১ কেজি | ৬৫ |
ACI Brown Atta | ১ কেজি | ৭০ |
ACI Pure Atta | ১ কেজি | ৬০ |
Fresh Atta | ১ কেজি | ৬৫ |
Bashundhara Atta | ১ কেজি | ৬০ |
আটার দাম বৃদ্ধির কারণসমূহ
২০২৫ সালে আটার দামে যে পরিবর্তন এসেছে, তার পেছনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে:
- গমের আমদানি খরচ বৃদ্ধি: আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম বেড়ে যাওয়ায় এর প্রভাব স্থানীয় বাজারেও পড়েছে।
- পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি: জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির ফলে পণ্য পরিবহন খরচ বেড়ে গিয়েছে।
- উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি: স্থানীয় মিলে গম প্রক্রিয়াকরণের খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে।
খোলা আটা বনাম ব্র্যান্ডেড আটা

বাজারে দুই ধরনের আটা পাওয়া যায়:
- খোলা আটা:
- দাম কম হওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষ এটি বেশি কিনে থাকে।
- প্রতি কেজি ৩৫-৫০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়।
- ব্র্যান্ডেড আটা:
- উন্নত মান এবং প্যাকেজিংয়ের কারণে দাম তুলনামূলক বেশি।
- প্রতি কেজি ৬৪-৭০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়।
পরামর্শ
- যারা কম বাজেটে আটা কিনতে চান, তারা স্থানীয় বাজার থেকে খোলা আটা কিনতে পারেন।
- স্বাস্থ্য সচেতন এবং গুণগত মান নিশ্চিত করতে চাইলে ব্র্যান্ডেড আটা কিনুন।
আটার স্বাস্থ্যগুন
আটা একটি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উপাদান যা শারীরিক শক্তি যোগায় এবং আমাদের দৈনন্দিন পুষ্টি চাহিদা পূরণে সহায়তা করে। তবে ভালো মানের আটা নির্বাচন করা অত্যন্ত জরুরি। নিম্নমানের বা পুরনো আটা বিভিন্ন স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে। নিচে স্বাস্থ্যবিষয়ক কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরা হলো:
- ভালোমানের আটা বেছে নিন:
- গম থেকে তৈরি করা আটা উচ্চমানের শর্করা এবং প্রোটিন সরবরাহ করে।
- ফাইবারযুক্ত আটা হজমে সহায়ক এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
- পুরনো আটা এড়িয়ে চলুন:
- পুরনো বা সঠিকভাবে সংরক্ষিত না থাকা আটা খাবারে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক জন্মাতে পারে।
- ফলিক অ্যাসিড ও আয়রনযুক্ত আটা:
- অনেক ব্র্যান্ডেড আটা এখন ফলিক অ্যাসিড ও আয়রন সমৃদ্ধ করে তৈরি হচ্ছে, যা রক্তস্বল্পতা দূর করতে সহায়ক।
- ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপযোগিতা:
- লো-গ্লাইসেমিক ইনডেক্স যুক্ত আটার পণ্য ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভালো।
- পরিমাণমতো ব্যবহার:
- অতিরিক্ত আটা গ্রহণ ওজন বৃদ্ধি করতে পারে, তাই সুষম খাবারের অংশ হিসেবে এটি গ্রহণ করুন।
আটার দাম কি বাড়তে পারে?
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, আগামী বছরে আন্তর্জাতিক বাজারে গমের সরবরাহ এবং স্থানীয় উৎপাদনের উপর ভিত্তি করে আটার দামে আরও পরিবর্তন দেখা যেতে পারে। যদি স্থানীয় গম উৎপাদন বাড়ানো যায় এবং আমদানির উপর নির্ভরশীলতা কমানো যায়, তবে আটার দাম স্থিতিশীল থাকতে পারে। এছাড়া, বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারী উদ্যোগ প্রয়োজন।
ক্রেতাদের জন্য টিপস
- দাম যাচাই করুন: বিভিন্ন দোকান এবং ব্র্যান্ডের মধ্যে দাম যাচাই করে সবচেয়ে সাশ্রয়ী পণ্যটি কিনুন।
- প্যাকেটের তারিখ দেখুন: ব্র্যান্ডেড আটা কেনার সময় মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ দেখে কিনুন।
- পরিমাণের উপর নজর দিন: বড় প্যাকেট, যেমন ২-৪ কেজি কিনলে সাধারণত কিছুটা সাশ্রয়ী হয়।
বাজারে পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি। ভালো মানের আটা পেতে সবসময় খোঁজখবর রাখুন এবং স্থানীয় বাজার সম্পর্কে সচেতন থাকুন।
আরও পড়ুনঃ বর্তমান বাজারে গুঁড়া দুধের দাম কত ২০২৫ | Milk Powder Price
উপসংহার
২০২৫ সালে বাংলাদেশের বাজারে আটার দামের উপর গমের আমদানি খরচ, উৎপাদন খরচ এবং পরিবহন ব্যয়ের বড় প্রভাব পড়েছে। তবে ক্রেতারা তাদের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন ব্র্যান্ড থেকে আটা ক্রয় করতে পারেন। ভবিষ্যতে বাজারে স্থিতিশীলতার উপর নির্ভর করবে দামের পরিবর্তন।