বাংলাদেশে আলু একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খাদ্যপণ্য, যা প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় বিশাল ভূমিকা পালন করে। এটি শুধু সাধারণ ভোক্তার জন্য নয়, কৃষি অর্থনীতিতেও একটি বড় ভূমিকা রাখে। ২০২৫ সালে এসে আলুর বাজার মূল্য নিয়ে আলোচনা করা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক, কারণ মূল্য ওঠানামা ভোক্তা, কৃষক এবং ব্যবসায়ীদের উপর গভীর প্রভাব ফেলে। আবহাওয়া, সরবরাহ চেইনের চ্যালেঞ্জ এবং বৈশ্বিক অর্থনীতির পরিবর্তনসহ বিভিন্ন কারণ আলুর বাজারমূল্যের পরিবর্তনে ভূমিকা রাখে। এই প্রেক্ষাপটে, বর্তমান বাজারে আলুর দাম এবং এর প্রভাব নিয়ে আলোচনা করবো আজকের আর্টিকেলে।
বর্তমান বাজারে আলুর দাম কত?
২০২৫ সালে বাংলাদেশের বাজারে আলুর দাম কিছুটা কমেছে। রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন বাজারে পুরনো আলু কেজিপ্রতি ৫০-৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এমনকি কিছু স্থানে নতুন আলুর দাম কেজিপ্রতি ৫৫-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সারাদেশে আলুর দাম গড়েঃ
- নতুন আলুঃ প্রায় ৪০-৬০ টাকা (জাতভেদে দাম কমবেশ হতে পারে)
- পুরাতন আলুঃ প্রায় ৫০-৬০ টাকা (জাতভেদে দাম কমবেশ হতে পারে)
গত পাঁচ বছরের মধ্যে ২০২৪ সালে আলুর দাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছিলো। ২০২৪ সালের নভেম্বরে আলুর কেজিপ্রতি মূল্য ৭৫ টাকা ছাড়িয়ে যায়, যা ২০২৩ সালের একই সময়ে ছিল ৪৫-৫০ টাকা।
দাম বৃদ্ধির পেছনে কয়েকটি কারণ :
- উৎপাদন ঘাটতি: কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে আলুর চাহিদা বছরে প্রায় ৮০ লাখ টন, তবে উৎপাদন তথ্যের মধ্যে অসঙ্গতি রয়েছে। হিমাগার মালিকদের মতে, উৎপাদন ৭০-৭৫ লাখ টনের মধ্যে সীমাবদ্ধ, যা চাহিদা পূরণে অপর্যাপ্ত।
- সংরক্ষণ ও সরবরাহ সমস্যা: হিমাগারে আলুর মজুদ কমে যাওয়া এবং সরবরাহ চেইনে বিঘ্ন ঘটায় বাজারে আলুর ঘাটতি দেখা দিয়েছে, যা দাম বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে।
- বিকল্প সবজির উচ্চ মূল্য: বাজারে অন্যান্য সবজি ও ডিমের দাম বৃদ্ধির ফলে ভোক্তারা আলুর দিকে ঝুঁকছেন, যা চাহিদা বাড়িয়ে দিচ্ছে এবং মূল্য বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলছে।
সরকার আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যার মধ্যে আমদানি শুল্ক কমানো এবং খোলাবাজারে বিক্রির উদ্যোগ অন্তর্ভুক্ত। তবে এখন পর্যন্ত এসব পদক্ষেপের উল্লেখযোগ্য প্রভাব বাজারে দেখা যায়নি।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নতুন আলু বাজারে এলে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আলুর দাম কমতে পারে। তবে সঠিক উৎপাদন ও চাহিদার তথ্য সংগ্রহ এবং সরবরাহ চেইন উন্নত করার মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদে আলুর বাজার স্থিতিশীল রাখা সম্ভব।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, আলুর বাজারে অস্থিরতা অব্যাহত রয়েছে। ভোক্তাদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বাজার পরিস্থিতি বিবেচনা করে ক্রয় সিদ্ধান্ত নিতে এবং প্রয়োজনে বিকল্প সবজি কিনতে।
আলুর দাম নিয়ে আরও বিশ্লেষণ

আলুর দাম বৃদ্ধি নিয়ে সাধারণ ভোক্তারা যেমন উদ্বিগ্ন, তেমনি ব্যবসায়ীরাও কিছু সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। বাজারে চাহিদা বাড়লেও সরবরাহের ঘাটতি এবং হিমাগারে মজুদ সমস্যা ব্যবসায়ীদের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কৃষকদের দৃষ্টিকোণ
কৃষকদের অভিযোগ, তারা উৎপাদন পর্যায়ে ন্যায্যমূল্য পান না। উৎপাদনের সময় সারের দাম বৃদ্ধি এবং শ্রমিক খরচ বৃদ্ধি পেলেও আলু বিক্রির ক্ষেত্রে সঠিক মূল্য পাওয়া কঠিন। তবে বাজারে যখন আলুর দাম বেড়ে যায়, তখন সেই লাভের বড় অংশ মধ্যস্বত্বভোগী এবং ব্যবসায়ীরা পেয়ে থাকেন।
মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাব
মধ্যস্বত্বভোগীরা বাজারে আলুর সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। তারা হিমাগারে আলু মজুদ করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করতে পারে, যা বাজারে দামের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। এ সমস্যা সমাধানে সরকারকে কঠোর মনিটরিং ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
ভোক্তাদের প্রতিক্রিয়া
ভোক্তারা বলছেন, অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম ইতোমধ্যেই ঊর্ধ্বমুখী। এরমধ্যে আলুর দাম বৃদ্ধিতে তাদের দৈনন্দিন খরচের চাপ আরও বেড়ে গেছে। বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো এ পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
সম্ভাব্য সমাধান
আলুর বাজারের এ অস্থিরতা কমানোর জন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে, যেমন:
- সরকারি উদ্যোগ: হিমাগারগুলোতে পর্যাপ্ত মজুদ নিশ্চিত করার পাশাপাশি কৃত্রিম সংকট সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ।
- সঠিক তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার: কৃষক ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করতে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করা যেতে পারে, যাতে তারা চাহিদা ও সরবরাহ সম্পর্কে সচেতন হতে পারে।
- উৎপাদন বাড়ানো: উন্নত জাতের আলু চাষ এবং কৃষকদের জন্য আধুনিক প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করা।
- বিকল্প আমদানি: দেশীয় চাহিদা মেটাতে নিকটবর্তী দেশ থেকে সাশ্রয়ী দামে আলু আমদানির পরিকল্পনা করা।
আরও পড়ুনঃ আজকে ব্রয়লার মুরগির বাচ্চার দাম কত ২০২৫
শেষ কথা
বর্তমান বাজারে আলুর দামের ঊর্ধ্বগতি শুধু অর্থনৈতিক সমস্যা নয়, এটি খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়েও উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। সরকার, ব্যবসায়ী এবং কৃষকদের একযোগে কাজ করতে হবে যাতে বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে আসে। অন্যদিকে, ভোক্তাদেরও সচেতনভাবে পণ্য কেনাকাটা করতে হবে এবং মজুদদারির প্রবণতা এড়িয়ে চলা উচিত।
আমরা আশা করি, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে নতুন আলুর সরবরাহ বৃদ্ধির মাধ্যমে বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।